হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এলকেএস ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক যুগান্তকারী গবেষণায় প্রকাশ করেছেন যে এপস্টাইন-বার ভাইরাস (EBV) কীভাবে নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল কার্সিনোমা (NPC) নামক ক্যান্সারের বৃদ্ধি ও বিস্তারকে প্রভাবিত করে। এই গবেষণাটি ভাইরাসের একটি নতুন কৌশল উন্মোচন করেছে, যেখানে এটি মানব জিনোমের ত্রিমাত্রিক গঠনকে পরিবর্তন করে ক্যান্সারের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করে। অধ্যাপক ডাই ওয়েই-এর নেতৃত্বে এই গবেষণা দলটি অত্যাধুনিক জিনোমিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে EBV এবং মানব জিনোমের মধ্যেকার জটিল সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন।
EBV, যা একটি সাধারণ ভাইরাস এবং বিশ্বের প্রায় ৯৫% প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পাওয়া যায়, এটি NPC কোষের মধ্যে জিনোমের গঠনকে "হুক" করার মাধ্যমে প্রভাবিত করে। এই প্রক্রিয়াটি কোষের জিনগত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় (epigenetic machinery) পরিবর্তন আনে, যা ভাইরাসের টিকে থাকা এবং ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে এবং ক্যান্সারের বিস্তার (metastasis) বাড়াতেও ভূমিকা রাখে। গবেষকরা দেখেছেন যে EBV নির্দিষ্ট কিছু জিনোমিক অঞ্চলে যুক্ত হয়ে জিনোমের ত্রিমাত্রিক বিন্যাস পরিবর্তন করে, যা জিনের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণকারী "এপিসেন্টিক সুইচ"-কে প্রভাবিত করে। এই পরিবর্তনগুলি ভাইরাসের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী প্রক্রিয়াগুলিকে শক্তিশালী করে।
গবেষণায় ১৭৭ জন NPC রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ "জিনোমিক সিগনেচার মার্কার" শনাক্ত করেছেন। এই মার্কারগুলি ক্যান্সারের বিস্তারের ঝুঁকি পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করতে পারে এবং রোগীর চিকিৎসার পরিকল্পনায় সহায়ক হতে পারে। এই আবিষ্কারের ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এপস্টাইন-বার ভাইরাসের এই "হুকিং" প্রক্রিয়াকে লক্ষ্য করে নতুন ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছেন।
জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি (CRISPR) এবং এপিসেন্টিক ওষুধ ব্যবহার করে এই ভাইরাল-জিনোমিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরীক্ষায় ভাইরাসের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে এবং টিউমারের বৃদ্ধি ধীর হয়েছে। এই পদ্ধতি প্রচলিত চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর সম্ভাবনাও রাখে। এই গবেষণাটি ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে এবং বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার রোগীর জন্য উন্নত চিকিৎসার আশা জাগিয়েছে। এই আবিষ্কারটি ভাইরোলজি, এপিসেন্টিকস এবং ক্লিনিকাল অনকোলজির মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ স্থাপন করেছে।