জাপানের নোরিনচুকিন ব্যাংক (Norinchukin Bank) তাদের আর্থিক বছরের শেষে রেকর্ড ১.৮ ট্রিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ১২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমন্বিত নিট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই বিশাল ক্ষতি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় সরকারি বন্ডের মূল্যায়নে বড় ধরনের পতন থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধির একটি প্রত্যক্ষ ফল। এই আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট কাজুতো ওকু (Kazuto Oku) ২০২৫ সালের ৩১শে মার্চ পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার স্থলাভিষিক্ত হবেন ম্যানেজিং এক্সিকিউটিভ অফিসার তারো কিতাবায়াশি (Taro Kitabayashi), যিনি ২০২৫ সালের ১লা এপ্রিল থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
এই পরিস্থিতি ব্যাংকটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ নির্দেশ করে। নোরিনচুকিন ব্যাংক তাদের বিনিয়োগ কৌশলে একটি আমূল পরিবর্তন আনছে। নতুন নেতৃত্বের অধীনে, ব্যাংকটি বিদেশি সরকারি বন্ডের উপর নির্ভরতা কমিয়ে জাপানি সরকারি বন্ডে (JGBs) বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এই কৌশলগত পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী সুদের হারের ওঠানামার ঝুঁকি কমাতে এবং ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে সহায়ক হবে। আর্থিক অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য, ব্যাংকটি মূলধন বৃদ্ধির পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে সদস্য সমবায়গুলিতে কম ডিভিডেন্ডের শেয়ার ইস্যু করা এবং পারপেচুয়াল সাবঅর্ডিনেটেড লোন (perpetual subordinated loans) পরিশোধ করা। এই পদক্ষেপগুলির ফলে ব্যাংকের কমন ইকুইটি টায়ার ১ (CET1) অনুপাত ১৯.২%-এ উন্নীত হয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, নোরিনচুকিন ব্যাংক ২০২৬ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে লাভজনকতায় ফিরে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা ৩০ বিলিয়ন থেকে ৭০ বিলিয়ন ইয়েন নিট লাভের আশা করছে। এই আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তাদের সংশোধিত বিনিয়োগ কৌশল থেকে প্রত্যাশিত লাভ এবং বিশ্বব্যাপী সুদের হারের স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল। এই ঘটনাগুলি নোরিনচুকিন ব্যাংকের অভিযোজন ক্ষমতা এবং নেতৃত্বের পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত আর্থিক পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য বিশ্বব্যাপী সুদের হারের পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগ কৌশলের গুরুত্বকেও স্পষ্ট করে। উল্লেখ্য, নোরিনচুকিন ব্যাংক জাপানের কৃষি, বনায়ন এবং মৎস্য সমবায়গুলির জন্য কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে এবং এটি জাপানের অন্যতম বৃহত্তম প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যার পোর্টফোলিও প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধির ফলে তাদের বিদেশি বন্ড পোর্টফোলিওতে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে, যা তাদের এই কৌশলগত পরিবর্তনের দিকে চালিত করেছে।