দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু এবং প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি কিম কিওন-হি-কে অভিশংসিত করা হয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইয়েওল-এর বিতর্কিত মার্শাল ল ঘোষণার ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনা দেশের সাংবিধানিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এক নতুন মোড় নিয়েছে।
আগস্ট ২০২৫-এ, বিশেষ প্রসিকিউটররা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সহায়তা, হলফনামা ভঙ্গ এবং সরকারি নথি জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইয়েওল-এর মার্শাল ল প্রবর্তনের প্রচেষ্টায় সহায়তা করেছিলেন। অন্যদিকে, প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি কিম কিওন-হি-এর বিরুদ্ধে ঘুষ, স্টক জালিয়াতি এবং উপহার গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে যে তিনি স্টক মার্কেটকে প্রভাবিত করতে এবং অবৈধভাবে সুবিধা নিতে জড়িত ছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে, যখন রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইয়েওল বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত আইনসভাকে পাশ কাটিয়ে জরুরি মার্শাল ল ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণা মাত্র কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল, কারণ জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতভাবে এটি প্রত্যাহারের জন্য ভোট দিয়েছিল। এর পরেই, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে, ইউন সুক-ইয়েওল-কে জাতীয় সংসদ অভিশংসিত করে এবং ৪ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে সাংবিধানিক আদালত তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়।
ইউন-এর অপসারণের পর, হান ডাক-সু সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, কিন্তু পরে তিনিও অভিশংসিত হন। অবশেষে, ৩ জুন, ২০২৫ তারিখে একটি বিশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির লি জে-মিউং বিজয়ী হন। এই মার্শাল ল ঘোষণাটি ছিল চার দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম এমন ঘটনা, যা দেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সংকট তৈরি করেছিল।
জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতভাবে মার্শাল ল প্রত্যাহার করে নেয়, যা এই ঘোষণার অযৌক্তিকতা বা অসাংবিধানিকতার ইঙ্গিত দেয়। সাংবিধানিক আদালত ইউন-কে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে অভিশংসনের বৈধতা নিশ্চিত করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু এবং প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি কিম কিওন-হি-এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির গভীর তদন্তের ইঙ্গিত দেয়।
এই আইনি প্রক্রিয়াগুলির ফলাফল ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক আচরণ এবং জবাবদিহিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করবে। এই ঘটনাগুলি দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।