বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের ৫.৮ শতাংশ থেকে কম। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) তাদের এপ্রিল ২০২৫-এর প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ২০২৫ অর্থবছরে (FY2025) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) প্রবৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে, যা ২০২৬ অর্থবছরে (FY2026) বেড়ে ৫.১ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধীরগতির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি, শিল্পক্ষেত্রে অসন্তোষ এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি।
মুদ্রাস্ফীতির হারও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে ৯.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ অর্থবছরে এটি ১০.২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া, বাজারের তথ্যের অভাব, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়নকে দায়ী করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে যে মুদ্রাস্ফীতি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৫ শতাংশে নেমে আসবে। তবে, জুলাই ২০২৫-এ মুদ্রাস্ফীতি ৮.৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা জুনের ৮.৪৮ শতাংশের চেয়ে বেশি। খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করছে, বিশেষ করে চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জাতীয় সঞ্চয় শক্তিশালীকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যবসা করার পরিবেশ উন্নত করা, এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ। যদিও সরকারি বিনিয়োগ প্রাথমিকভাবে ধীরগতিতে বাড়ছে, তবে আশা করা হচ্ছে যে এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। রপ্তানি ও রেমিটেন্স খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা চলতি হিসাবের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করছে। তবে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ঋণ গ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধি বেসরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করছে এবং শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমিয়ে ৩.৭৬ শতাংশে (FY2024-25) এনেছে। তবে, মধ্য মেয়াদে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পুনরায় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হয়। বিশ্ব ব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য সহজীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।