গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে মানবিক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। মে এবং জুন ২০২৫ মাসে ইসরায়েলি হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত এবং বহু আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়েছে। বিশেষ করে, গাজা সিটির আল-দারাজ এলাকায় হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। জুন মাসে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলে আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে ৩ জন নিহত এবং ২ জন আহত করেছে। এই হামলাগুলোর ফলে বহু বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুলাই মাসের ২২ তারিখে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় যে "গাজা মানবতা'র জন্য" (Gaza for Humanity) অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, এই অভিযানের লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তা প্রদান করা হলেও, article-এর তথ্য অনুযায়ী এটি ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি অজুহাত মাত্র এবং এটি আইনের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একই দিনে জানায় যে ইসরায়েল এই অভিযান শুরুর পর থেকে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যার তিন-চতুর্থাংশই সহায়তা বিতরণের স্থানগুলোর কাছাকাছি নিহত হয়েছে।
মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে, এক মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি গুরুতর মানবিক সংকটে ভুগছেন। ১.৭৬ মিলিয়ন মানবিক সহায়তা প্যাকেজ বিতরণ করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার জুলাই মাসের ২৭ তারিখে জানান যে গাজায় প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন কয়েকদিন ধরে না খেয়ে আছে এবং খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করার সময়ও মানুষ গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইসরায়েল খাদ্য, ঔষধ এবং জ্বালানির উপর থেকে শুল্ক বাধা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, আরও অনেক সহায়তার প্রয়োজন। অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করে যে এই সংকটটি হামাস তৈরি করেছে এবং এটি একটি জনসংযোগ (PR) কৌশল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে তারা কেবল জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু করে এবং বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাসকে দায়ী করে, কারণ হামাসের জঙ্গিরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ করে। তবে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (Human Rights Watch) বলেছে যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় একটি নতুন মার্কিন-সমর্থিত সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল। এই পরিস্থিতি গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের দীর্ঘ ইতিহাস এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের কথিত 'অমানবিকীকরণের এজেন্ডা' এই সংঘাতের প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল করে তুলেছে।