বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রথম পর্ব: সেনেটর রদ্রিগো পাজ পেরেইরা এগিয়ে, দ্বিতীয় পর্বের পথে

সম্পাদনা করেছেন: Olha 1 Yo

আগস্ট ১৭, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম পর্বে, সেনেটর রদ্রিগো পাজ পেরেইরা উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় পর্বের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। এই নির্বাচন বলিভিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, কারণ প্রায় দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা মুভমেন্ট টুওয়ার্ডস সোশ্যালিজম (MAS) পার্টির প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে, মধ্য-ডানপন্থী প্রার্থী সেনেটর রদ্রিগো পাজ পেরেইরা ৩২% ভোট পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হোর্হে “টুতো” কুইরোগা, ২৭% ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। এই ফলাফল নিশ্চিত করেছে যে কোনও প্রার্থীই প্রয়োজনীয় ৫০% ভোট অর্জন করতে পারেননি, যার ফলে ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এই ঐতিহাসিক ফলাফলটি MAS পার্টির জন্য একটি বড় ধাক্কা, যারা বিগত দুই দশক ধরে বলিভিয়ার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। MAS পার্টির প্রার্থী, এদুয়ার্দো দেল কাস্তিলো, মাত্র ৩.১৬% ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে শেষ করেছেন, যা দলটির জন্য একটি বড় পতন। এই পতনকে কেবল একটি নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং এটি পার্টির অভ্যন্তরীণ বিভেদ, দুর্নীতির অভিযোগ এবং দীর্ঘদিনের শাসনের ফলে সৃষ্ট জন অসন্তোষের প্রতিফলন। বিশেষ করে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এভো মোরালেস এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি লুইস আর্সের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব MAS পার্টিকে দুর্বল করে দিয়েছে। মোরালেস, যিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তিনি তার সমর্থকদের ব্যালট বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা নির্বাচনে বাতিল ভোটের হার ১৯.৪% এ পৌঁছে দিয়েছে, যা বলিভিয়ার নির্বাচনের গড় হারের চেয়ে অনেক বেশি। এই ঘটনাটি ভোটারদের মধ্যে বিদ্যমান অসন্তোষ এবং বিকল্পের প্রতি আকাঙ্ক্ষার একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত বহন করে।

রদ্রিগো পাজ পেরেইরার এই অপ্রত্যাশিত উত্থানকে অনেক বিশ্লেষক 'ডার্ক হর্স' বা অপ্রত্যাশিত বিজয়ী হিসেবে দেখছেন। তার প্রচারণার মূল বিষয় ছিল 'সবার জন্য পুঁজিবাদ' এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। তার নির্বাচনী প্রচারণার সহচর, প্রাক্তন পুলিশ ক্যাপ্টেন এডমান লারা, যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পরিচিত, তিনি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে ব্যাপক সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অনেক ভোটার পরিবর্তন চেয়েছিলেন এবং পাজ পেরেইরাকে সেই পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন।

বলিভিয়ার এই রাজনৈতিক পরিবর্তন একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রবণতার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে দক্ষিণ আমেরিকায় ডানপন্থী বা মধ্যপন্থী দলগুলোর উত্থান দেখা যাচ্ছে, যেমনটি আর্জেন্টিনায় জাভিয়ের মিলেয়ের বিজয় থেকে স্পষ্ট। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে বলিভিয়ার ভোটাররা ঐতিহাসিকভাবে প্রতি ২০ বছর পর পর বাম ও ডানপন্থী মতাদর্শের মধ্যে পরিবর্তন আনে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট, বিশেষ করে প্রায় ২৫% মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি ও ডলারের তীব্র ঘাটতি, এবং আমদানি পণ্যের উচ্চমূল্য ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে তুলেছে। এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোই MAS পার্টির দুই দশকের শাসনের অবসান ঘটাতে একটি প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।

পর্যবেক্ষক মিশন, যেমন অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস (OAS) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), নির্বাচন প্রক্রিয়াকে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল এবং প্রতিযোগিতামূলক বলে বর্ণনা করেছে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের তারিখ ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫। এই নির্বাচন বলিভিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, কারণ ভোটাররা একটি নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন নীতি নির্ধারণের সুযোগ পাচ্ছেন।

উৎসসমূহ

  • Deutsche Welle

  • El País

  • Wikipedia

  • Euronews

  • T24

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রথম পর্ব: ... | Gaya One