আগস্ট ২০২৫-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০% শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় চীন এবং ব্রাজিল তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। উভয় দেশই বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য গতিশীলতার পরিবর্তন এবং সুরক্ষা নীতির মুখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য কৌশলগত সমন্বয়ের উপর জোর দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ব্রাজিলিয়ান পণ্যের উপর, বিশেষ করে কফি এবং গরুর মাংসের মতো প্রধান রপ্তানির উপর আরোপিত এই শুল্ক, ব্রাজিলের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ব্রাজিলিয়ান শিল্প কনফেডারেশন (CNI) সতর্ক করেছে যে এই শুল্ক ২১ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো রপ্তানি হ্রাস ঘটাতে পারে এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আগস্ট মাসে রপ্তানি প্রত্যাশা সূচক ৫.১ পয়েন্ট কমে ৪৬.৬-এ দাঁড়িয়েছে, যা একটি প্রত্যাশিত সংকোচন নির্দেশ করে। কর্মসংস্থান প্রত্যাশাও হ্রাস পেয়েছে, যা আগামী ছয় মাসে নিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম বলে ইঙ্গিত দেয়।
এই পরিস্থিতিতে, ব্রাজিল চীনের সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি বিকল্প বাজার খুঁজছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ব্রাজিলের মুখ্য উপদেষ্টা সেলসো আমারিম-এর সাথে এক ফোনালাপে, মার্কিন শুল্ককে 'নির্বিচার' এবং 'ভয়ভীতি প্রদর্শনের' একটি উপায় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি জাতিসংঘের সনদ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর নিয়ম লঙ্ঘনের উপর জোর দিয়ে বলেছেন যে চীন ব্রাজিলের উন্নয়ন অধিকার রক্ষায় এবং এই ধরনের 'অন্যায্য' শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা দা সিলভা, মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত BRICS প্রতিক্রিয়া তৈরি করার জন্য ভারত ও চীনের সাথে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন যে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলির কাছ থেকে একটি সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া এককভাবে কাজ করার চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, জুলাই ২০২৫-এ রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ১৭তম BRICS শীর্ষ সম্মেলন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, যেখানে ইন্দোনেশিয়া একটি পূর্ণ সদস্য হিসেবে এবং বেলারুশ, বলিভিয়া, কাজাখস্তান সহ দশটি দেশ অংশীদার দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে, যা একটি বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে, চীন সম্প্রতি ১৮৩টি নতুন ব্রাজিলিয়ান কফি কোম্পানিকে তার বাজারে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়াও, চীন ব্রাজিল থেকে হাঁস, টার্কি, মুরগির নাড়িভুঁড়ি, ভুট্টা ইথানল উপজাত (DDG এবং DDGS) এবং চিনাবাদাম খৈলের মতো পাঁচটি নতুন কৃষি পণ্যের আমদানি অনুমোদন করেছে। ২০২৪ সালে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বন্ধনের একটি প্রমাণ।
এই উন্নয়নগুলি সুরক্ষা নীতির মুখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং অংশীদারিত্ব বৈচিত্র্যময় করার ব্রাজিলের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির প্রতিক্রিয়ায় চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে গভীরতর সম্পর্ক স্থাপন এবং BRICS জোটের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা খোঁজা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ, যা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।