তুরস্কের সামসুন প্রদেশের ভেজিকপ্রোপ районов অবস্থিত প্রাচীন হিট্টাইট শহর নেৰিক-এ (Oymaağaç Höyük) ২০২৩ সালের খননকার্যে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা ৩,০০০ বছরের পুরনো আখরোটের খোসা এবং হিট্টাইটদের জল-দেবতা টেশুবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এক বিশাল ভূগর্ভস্থ ঝর্ণার সন্ধান পেয়েছেন। এই আবিষ্কারগুলি নেৰিক শহরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের পাশাপাশি প্রাচীন হিট্টাইট সভ্যতার জীবনযাত্রা ও বিশ্বাস সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।
খননকার্যের নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক ডঃ রাইনার সিজন ৩,০০০ বছরের পুরনো আখরোটের খোসা আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। এই খোসাগুলি কেবল খাদ্য হিসেবেই নয়, বরং প্রাচীন পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রার উপর তাদের প্রভাব বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, আখরোটের খোসা বিশ্লেষণ করে প্রাচীন পরিবেশের উন্মুক্ততা বা বনভূমির ঘনত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সুইডেনের মেসোলিথিক থেকে লৌহ যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রাপ্ত আখরোটের উপর ভিত্তি করে করা গবেষণা পরিবেশের উপর মানুষের প্রভাবের একটি দীর্ঘ চিত্র তুলে ধরে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল নেৰিক-এর পবিত্র ঝর্ণা, যা জল-দেবতা টেশুবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ছিল। ৮ মিটার গভীর এই ঝর্ণাটিকে হিট্টাইট বিশ্বের বৃহত্তম ও বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ ঝর্ণা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। প্রাচীন আনাতোলিয়ায়, জল-দেবতারা আকাশ ও পর্বতমালার শাসক ছিলেন এবং বৃষ্টি, বজ্রপাত ও ঝড়ের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল। নেৰিক-এর এই ঝর্ণাটি কেবল একটি জল উৎসই ছিল না, বরং এটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রও ছিল। হিট্টাইটরা জলকে পবিত্র মনে করত এবং ঝর্ণা ও জলধারাগুলি তাদের ধর্মীয় আচারে বিশেষ স্থান অধিকার করত।
২০২৩ সালের খননকার্যে লৌহ যুগের (Iron Age) বিভিন্ন নিদর্শন, যেমন কৃষি সরঞ্জাম, তাঁতের উপকরণ এবং অন্যান্য কাঠের সামগ্রীও পাওয়া গেছে। এইগুলি লৌহ যুগের মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষি পদ্ধতি এবং কারুশিল্প সম্পর্কে ধারণা দেয়। লৌহ যুগ (আনুমানিক ১২০০-৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ছিল প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল, যখন লোহা প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়। আনাতোলিয়ায় লৌহ যুগের সূচনা প্রায় ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হয়েছিল এবং এই সময়ের সরঞ্জামগুলি সেই সময়ের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পরিচয় বহন করে।
এই খননকার্যগুলি নেৰিক-এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করছে এবং এই অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করছে। এই আবিষ্কারগুলি হিট্টাইট সভ্যতার গভীরতা এবং তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের উপর আলোকপাত করে, যা আমাদের প্রাচীন বিশ্বকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এই ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানগুলি অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সংযোগ স্থাপন করে এবং মানব সভ্যতার বিবর্তনের ধারাকে উন্মোচন করে।