ক্রোয়েশিয়ার ইলক শহরের কাছে মোহোভো গ্রামে দানিয়ুব নদীর তীরে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১,৮০০ বছরের পুরনো একটি রোমান প্রহরী মিনার আবিষ্কার করেছেন। এই মিনারটি সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের (১৬১-১৮০ খ্রিস্টাব্দ) শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত, দানুবিয়ান লাইমসের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ ছিল। প্রায় ছয় মিটার উঁচু এই কাঠের কাঠামোটি একটি কৌশলগত অবস্থানে ছিল, যা চারপাশ থেকে গভীর গিরিখাত দ্বারা প্রাকৃতিক সুরক্ষা পেত এবং বিস্তৃত এলাকার চমৎকার দৃশ্য দেখা যেত। এটি ইলক এবং সোতিন-এর মতো কাছাকাছি প্রতিরক্ষা কাঠামোর সাথে চাক্ষুষ যোগাযোগ রাখত, যা প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল।
খননকার্যের সময়, ফিবুলে (বর্মের অংশ), অস্ত্রের খণ্ডাংশ, অশ্বারোহী সরঞ্জামের অংশ এবং মৃৎশিল্পের মতো অসংখ্য প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে, যা রোমান সৈন্যদের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বস্তুগুলির মধ্যে একটি হল একটি লোহার কুঠার, যা সম্ভবত একটি সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহৃত হত। এছাড়াও, ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম দিকের ভিনকোভসি সংস্কৃতির একটি পূর্ববর্তী প্রাগৈতিহাসিক বসতির ধ্বংসাবশেষও চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আবিষ্কারটি দানিয়ুব বরাবর রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা কৌশল সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে এবং প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করে।
এপ্রিল ২০২৫ সালে শুরু হওয়া খননকার্য সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম মন্ত্রণালয় দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছে এবং আগামী বছরও এটি অব্যাহত থাকবে। এই মিনারটি রোমান সাম্রাজ্যের সীমান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, যা জার্মানিক উপজাতিদের আক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করত। মার্কাস অরেলিয়াসের শাসনামলে, বিশেষ করে মারকোমানিক যুদ্ধের (১৬৬-১৮০ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালে, রোমান সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে তাদের সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। মোহোভোর এই মিনারটি দানিয়ুব নদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং পয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করত, যা গভীর গিরিখাত দ্বারা প্রাকৃতিক ভাবে সুরক্ষিত ছিল।
খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলির মধ্যে রয়েছে ফিবুলে, যা সৈন্যদের পোশাক এবং অলঙ্কার হিসাবে ব্যবহৃত হত, অস্ত্রের অংশ, যেমন লোহার কুঠার এবং তীরের ফলা, এবং ঘোড়ার সরঞ্জাম, যা রোমান অশ্বারোহী বাহিনীর কার্যকারিতা নির্দেশ করে। মৃৎশিল্পের নিদর্শনগুলি সৈন্যদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার উপর আলোকপাত করে। এই আবিষ্কারটি কেবল রোমান সামরিক কৌশলের উপরই আলোকপাত করে না, বরং এটি এই অঞ্চলের দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসকেও তুলে ধরে। ভিনকোভসি সংস্কৃতির মতো প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার নিদর্শনগুলিও এখানে পাওয়া গেছে, যা হাজার হাজার বছর ধরে এই স্থানের গুরুত্ব প্রমাণ করে। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।