তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহর তার ডিউলুক প্রাচীন শহরকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে এবং পর্যটন বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনরুজ্জীবন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০২৫ সালে এই উদ্যোগের মাধ্যমে গাজিয়ান্তেপ মেট্রোপলিটন পৌরসভা এবং শেহিতকামিল পৌরসভা একটি সমন্বিত প্রচার ও সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এই প্রকল্পের আওতায়, দর্শনার্থীদের জন্য নতুন পরিকাঠামো তৈরি করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে পাথরের কোয়ারি সড়ক, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য স্থান, বসার ব্যবস্থা এবং সুন্দর বাগান। দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তথ্যবহুল এবং বহুভাষিক নির্দেশিকা স্থাপন করা হবে। প্রাচীন পাথরের কারুকার্য এবং ডিজিটাল মাধ্যমে ঐতিহাসিক কাহিনি উপস্থাপনের উপর কর্মশালা আয়োজন করা হবে। এছাড়াও, উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শনী এবং সেমিনারের আয়োজন করা হবে।
ডিউলুক প্রাচীন শহরের খনন কাজ ২০২৫ সালের জন্য শুরু হয়েছে। গাজিয়ান্তেপ গভর্নরেট ডিউলুক প্রাচীন শহর সমন্বয়কারী খনন অধিদপ্তরের জন্য প্রয়োজনীয় কন্টেইনার স্থাপন করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এই প্রচেষ্টাগুলি সাইটটির লুকানো কাঠামো এবং ঐতিহাসিক মূল্যবোধ উন্মোচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিউলুক প্রাচীন শহর প্রায় ৬ লক্ষ বছর পুরনো, যা মেসোপটেমিয়া এবং আনাতোলিয়ার সভ্যতার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি তার পাথরের সমাধি, পাথরের কোয়ারি এবং বসতি ধ্বংসাবশেষের জন্য পরিচিত, বিশেষ করে এখানে বিশ্বের বৃহত্তম মিথ্রাইয়াম (Mithraeum) অবস্থিত। মিথ্রাইয়াম হল প্রাচীন রোমান ধর্মের একটি রহস্যময় উপাসনা কেন্দ্র, যা মূলত পারস্যের মিথ্রা দেবতার উপাসনার সাথে যুক্ত ছিল। ডিউলাকে আবিষ্কৃত মিথ্রাইয়ামগুলি আনাতোলিয়ার প্রথম ভূগর্ভস্থ মিথ্রা মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম, যা ১ম থেকে ৩য় শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহৃত হত। এই স্থানগুলি ধর্মীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তুলে ধরে।
গাজিয়ান্তেপ মেট্রোপলিটন পৌরসভার মেয়র, ফातমা শাহিন, শহরের প্রচারের জন্য বিখ্যাত লেখক আহমেদ উমিতের সাথে সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি এই স্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। আহমেদ উমিত, যিনি নিজেও গাজিয়ান্তেপের অধিবাসী, তিনি শহরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রচারের উপর জোর দিয়েছেন এবং এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে গাজিয়ান্তেপকে একটি ব্র্যান্ড শহর হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডিউলুক প্রাচীন শহর, যা হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন সভ্যতার মিলনস্থল ছিল, তা এখন বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে একটি বিশেষ স্থান করে নিতে প্রস্তুত। এই পুনরুজ্জীবন প্রকল্প কেবল ঐতিহাসিক স্থানটির সংরক্ষণই করবে না, বরং এটি এই অঞ্চলের পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।