১৯৮০-এর দশকে লিবিয়ার মরুভূমিতে মিশরীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের রহস্যময় অন্তর্ধান আজও ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে এক অমীমাংসিত রহস্য। বহু অনুসন্ধান সত্ত্বেও, এই সৈন্যদের ভাগ্যের কোনো চূড়ান্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এই ঘটনাটি ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে, যা আজও কৌতূহল জাগিয়ে তোলে।
মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডঃ ওলাফ ক্যাপার বালু ঝড়ের তত্ত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "বালু ঝড়ের কারণে ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুসারে, পূর্ববর্তী বালু ঝড়গুলিতে উল্লেখযোগ্য হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।" আনুমানিক ৫০,০০০ সৈন্যের এই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি এখনও বিতর্কের একটি বিষয়। কিছু পণ্ডিত মনে করেন যে লিবিয়ার রাজা টলেমি ত্রয়োদশ-এর বাহিনীর হাতে এই ব্যাটালিয়ন পরাজিত হয়েছিল। তারা মন্দিরের শিলালিপির উল্লেখ করেন যেখানে মিশরীয় বাহিনীকে পরাজিত করার একটি যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে। তবে, এই শিলালিপিগুলি ১৯৮০-এর দশকের অনেক আগের সময়ের, যা এই তত্ত্বটিকে অত্যন্ত অসম্ভব করে তোলে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে ১৯৮৩ সালে একটি অভিযান মিশর-লিবিয়া সীমান্ত ছয় মাস ধরে অনুসন্ধান করে, কিন্তু এই অঞ্চলের সাথে নিখোঁজ সৈন্যদলের কোনও উল্লেখযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পায়নি। পরে, ২০০০ সালে, তেল অনুসন্ধানকারীরা নিখোঁজ সেনাবাহিনীর সময়ের সম্ভাব্য নিদর্শন আবিষ্কারের খবর দেয়, কিন্তু এই আবিষ্কারগুলি আর অনুসরণ করা হয়নি। ১৮ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত, এই মিশরীয় সেনাবাহিনীর ব্যাটালিয়নের অন্তর্ধান ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় অমীমাংসিত ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে রয়ে গেছে।
বালু ঝড় এবং মরুভূমি অভিযানগুলি সামরিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বালু ঝড়গুলি কেবল দৃশ্যমানতাই কমায় না, বরং শ্বাসকষ্ট এবং সরঞ্জামের ক্ষতিও করতে পারে। যেমন, ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তীব্র বালু ঝড়গুলি জোট বাহিনীর বিমান ও স্থল অভিযানকে ব্যাহত করেছিল। বালু কণাগুলি সরঞ্জামের যন্ত্রাংশ, বিশেষ করে ইঞ্জিন এবং ফিল্টারগুলির ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। লিবিয়ার মতো অঞ্চলে, যেখানে বালু ঝড়ের প্রকোপ বেশি, সেখানে এই ধরনের ঘটনাগুলি সামরিক অভিযানকে আরও জটিল করে তোলে।
প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে, টলেমি ত্রয়োদশ (খ্রিস্টপূর্ব ৬২/৬১ – ৪৭ খ্রিস্টপূর্ব) মিশরের রাজা ছিলেন এবং তাঁর বোন ক্লিওপেট্রা সপ্তম-এর সহ-শাসক ছিলেন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়ার যুদ্ধে জুলিয়াস সিজারের বাহিনীর বিরুদ্ধে মিশরীয় বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় নিহত হন। তাঁর পিতা টলেমি দ্বাদশ আউলেতেস-এর পুত্র টলেমি ত্রয়োদশ তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তাঁর বোনের সাথে মিশর শাসন করেন। ৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, টলেমি তাঁর পিতার মিত্রদের ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন এবং রোমান জেনারেল পম্পেইকে জাহাজ ও সৈন্য সরবরাহ করেছিলেন। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলি অতীতের সামরিক অভিযান এবং তাদের পরিণতির উপর আলোকপাত করে, যদিও ১৯৮০-এর দশকে নিখোঁজ হওয়া মিশরীয় বাহিনীর সাথে এর সরাসরি সম্পর্ক নেই।
তেল অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলিও প্রায়শই দুর্গম মরুভূমি অঞ্চলে কাজ করে। লিবিয়ার মরুভূমিতে তেল অনুসন্ধানের ইতিহাস ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু হয়, যখন এসো, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি সেখানে অনুসন্ধান শুরু করে। ২০০০-এর দশকের শুরুতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি লিবিয়ার তেল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ পায়। ২০০৫ সালে, ২৭টি দেশের ৫১টি সংস্থা একটি নিলামে অংশ নেয় এবং তেল খাতে লক্ষ লক্ষ ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই অনুসন্ধানগুলি প্রায়শই দুর্গম অঞ্চলে পরিচালিত হয়, যেখানে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল ১৯৮৩ সালে মিশর-লিবিয়া সীমান্ত ছয় মাস ধরে অনুসন্ধান করেছিল, কিন্তু নিখোঁজ সেনাদলের কোনো উল্লেখযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পায়নি। এটি এই রহস্যের গভীরে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা ছিল, যা আজও অমীমাংসিত। এই ধরনের অনুসন্ধানগুলি প্রায়শই দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল হয়, এবং ফলাফল সবসময় নিশ্চিত হয় না।