শিক্ষকের প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, যা 'পাইগম্যালিয়ন প্রভাব' নামে পরিচিত। এই মনস্তাত্ত্বিক ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে যে, শিক্ষকদের উচ্চ প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের শেখার উন্নতি ঘটাতে পারে, যেখানে নিম্ন প্রত্যাশা বিপরীত ফল দিতে পারে। এটি একটি স্ব-পূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীর মতো কাজ করে, যেখানে শিক্ষকের বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের আচরণ ও ফলাফলকে প্রভাবিত করে।
এই ধারণাটি প্রথম আলোচিত হয়েছিল রবার্ট রোসেন্থাল এবং লেনোর জ্যাকবসন-এর ১৯৬৮ সালের গবেষণা 'পাইগম্যালিয়ন ইন দ্য ক্লাসরুম'-এ। তারা দেখিয়েছেন যে, শিক্ষকদের যখন কিছু শিক্ষার্থীর প্রতি উচ্চতর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের প্রত্যাশা জানানো হয়েছিল, তখন সেই শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো ফল করেছিল। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, শিক্ষকের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং শেখার প্রতি তাদের মনোযোগী করে তোলে।
শিক্ষাবিদ ইয়ানা টিমোশুক বলেন, "যদি আমি আমার শিক্ষার্থীকে সমস্যাযুক্ত বলে আশা করি, তবে আমি তাদের কর্মক্ষমতায় তা বাড়িয়ে তুলব। আমাদের মস্তিষ্ক শক্তি সঞ্চয় করার জন্য তৈরি, তাই যদি শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেয় যে শিক্ষার্থী সমস্যাযুক্ত, তবে তারা এটি প্রমাণ করার জন্য সবকিছু করবে।" শিক্ষার্থীদের প্রেরণা এবং সাফল্যের উপর শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব অপরিসীম। ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার্থীর প্রতি একই শিক্ষকের আচরণ ভিন্ন হতে পারে, যা তাদের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিক্ষকের ইতিবাচক প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চতর একাডেমিক আত্ম-ধারণা তৈরি করে, যা তাদের ভবিষ্যতের কর্মক্ষমতার পূর্বাভাস দেয়। এই প্রভাবটি কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শ্রেণিকক্ষের সামগ্রিক পরিবেশকেও প্রভাবিত করতে পারে। শিক্ষকের ইতিবাচক এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রত্যাশা একটি সহায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশে উৎসাহিত হয়।
শিক্ষাবিদ দারিয়া ওলিনিক 'এডুকেশনাল ক্রাফট' ইউটিউব চ্যানেলের একটি সাক্ষাৎকারে এই পাইগম্যালিয়ন প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষকের প্রত্যাশার প্রভাবের উপর জোর দিয়েছেন। শিক্ষকদের উচিত তাদের সকল শিক্ষার্থীর প্রতি সমানভাবে উচ্চ প্রত্যাশা রাখা এবং তাদের বিকাশে সহায়তা করা। এটি কেবল শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সাফল্যই নিশ্চিত করবে না, বরং একটি ইতিবাচক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করবে। শিক্ষকের বিশ্বাস এবং আচরণ শিক্ষার্থীদের জীবনে এক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, যা তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।