প্লাস্টিক দূষণ একটি গুরুতর বৈশ্বিক সংকট, যা পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। এই সংকট মোকাবিলায় ১৭৯টি দেশের প্রতিনিধিরা জেনেভায় একত্রিত হয়েছেন একটি যুগান্তকারী বৈশ্বিক চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে। এই আলোচনা ৫ থেকে ১৪ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত চলবে এবং এটি ইন্টারগভর্নমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটি (INC)-এর পঞ্চম সেশনের দ্বিতীয় পর্ব (INC-5.2)। এই চুক্তিটি প্লাস্টিকের সম্পূর্ণ জীবনচক্র, অর্থাৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি পর্যন্ত সকল দিককে অন্তর্ভুক্ত করবে, যার মূল লক্ষ্য হলো প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস করা এবং পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP)-এর নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসন বলেছেন, "বিশ্ব একটি ঐতিহাসিক চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যা প্লাস্টিক দূষণকে শেষ করতে পারে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, "প্লাস্টিক দূষণ প্রকৃতিতে, আমাদের সমুদ্রে এবং এমনকি আমাদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়েছে।" এই চুক্তিটি ২০২২ সালে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, যার লক্ষ্য ছিল দুই বছরের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ সংকট মোকাবিলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক আইনত বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করা।
আলোচনায় প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো। ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)-এর মতো দেশগুলো একটি উচ্চাভিলাষী এবং আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তির পক্ষে রয়েছে, যা প্লাস্টিক উৎপাদন হ্রাসের উপর জোর দেয়। অন্যদিকে, সৌদি আরব এবং রাশিয়ার মতো তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলো পুনর্ব্যবহারের উপর বেশি মনোযোগ দিতে চায়। গ্রিনপিস-এর মতো পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক উৎপাদন ৭৫% কমানোর এবং কিছু একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। পূর্ববর্তী আলোচনা, যেমন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত বৈঠক, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিল, যা জেনেভার আলোচনাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন ২০৬০ সালের মধ্যে তিনগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি না এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দ্য ল্যানসেট-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্লাস্টিক দূষণ প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং একটি শক্তিশালী চুক্তির বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।