স্পেসএক্স-এর স্টারলিঙ্ক উপগ্রহগুলি রেডিও জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণে উল্লেখযোগ্যভাবে হস্তক্ষেপ করছে, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে প্রভাবিত করতে পারে। কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা, যা ১৭ জুলাই, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে, এই সমস্যাটি তুলে ধরেছে। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্টারলিঙ্ক উপগ্রহগুলি থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে নির্গত রেডিও তরঙ্গ জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণের জন্য নির্ধারিত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলিতে প্রবেশ করছে।
গবেষণায় ৭৬ মিলিয়ন মহাকাশ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে প্রায় ৩০% চিত্র স্টারলিঙ্ক উপগ্রহের কারণে সৃষ্ট হস্তক্ষেপ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এই হস্তক্ষেপ উপগ্রহের অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রনিক্স থেকে উদ্ভূত হয় এবং এটি এমন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলিতেও দেখা যায় যা রেডিও জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণার জন্য সুরক্ষিত রাখা উচিত, যেমন ১৫০.৮ মেগাহার্টজ। এই অনিচ্ছাকৃত নির্গমনগুলি অপ্রত্যাশিত এবং এদের পূর্বাভাস দেওয়া বা ব্লক করা কঠিন, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের স্টারলিঙ্ক উপগ্রহগুলি প্রথম প্রজন্মের তুলনায় উচ্চতর এবং বিস্তৃত পরিসরে অনিচ্ছাকৃত বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিকিরণ নির্গত করে, যা সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই উপগ্রহগুলি মহাকাশে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হলেও, তাদের এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি মহাকাশ গবেষণার জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) বর্তমানে কেবল ইচ্ছাকৃত সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করে, অনিচ্ছাকৃত নির্গমনগুলির জন্য কোনও নিয়ম নেই, যা এই সমস্যা সমাধানে একটি বড় বাধা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কারণ এই হস্তক্ষেপগুলি মহাবিশ্বের দূরবর্তী বস্তু থেকে আসা ক্ষীণ রেডিও তরঙ্গ সনাক্তকরণে বাধা সৃষ্টি করছে। এর ফলে, মহাবিশ্বের উৎপত্তি, ডার্ক ম্যাটার এবং আইনস্টাইনের তত্ত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা কঠিন হয়ে পড়ছে।
যদিও স্পেসএক্স এই বিষয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করছে এবং সমাধানের জন্য কাজ করছে, তবে এই সমস্যাটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির উপগ্রহ নির্গমনের জন্য নতুন নিয়মাবলী তৈরি করা এবং উপগ্রহ অপারেটরদের সাথে সহযোগিতা করে প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এই পদক্ষেপগুলি অপরিহার্য।