ইসরায়েলি গবেষকদের একটি যুগান্তকারী গবেষণা ইওসিনোফিলিক এসোফ্যাগাইটিস (EoE) নামক একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসায় নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা থাইমিক স্ট্রোমাল লিম্ফোপোয়েটিন (TSLP) নামক একটি প্রোটিনকে এই রোগের বিকাশে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই আবিষ্কারটি EoE-এর জন্য আরও কার্যকর এবং লক্ষ্যযুক্ত চিকিৎসার পথ খুলে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে TSLP প্রোটিনটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করে এবং খাদ্যনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা EoE-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। TSLP-কে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে রোগের লক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। এই গবেষণাটি 'Allergy' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যা ক্লিনিকাল ইমিউনোলজির একটি শীর্ষস্থানীয় জার্নাল। EoE একটি ক্রমবর্ধমান রোগ, যা বিশ্বজুড়ে এবং বিশেষ করে ইসরায়েলে গত দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রোগের কারণে খাদ্য গিলতে অসুবিধা, বুকে ব্যথা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক বৃদ্ধিতে বাধা সহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। বর্তমানে, এর চিকিৎসায় কঠোর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যামিনো অ্যাসিড-ভিত্তিক ফর্মুলার ব্যবহার করা হয়, তবে এগুলোর কার্যকারিতা সীমিত।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, অধ্যাপক এরিয়েল মুনিটজ এবং ডক্টরাল ছাত্রanish ডিসিলভার নেতৃত্বে, এই TSLP প্রোটিনকে লক্ষ্য করে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির বিকাশের উপর জোর দিয়েছেন। তাদের গবেষণায়, TSLP-কে ব্লক করা হলে রোগের তীব্রতা কমে যায় বা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এই গবেষণাটি ইসরায়েল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, ইউএস-ইসরায়েল বাইন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং আজরিলি ফাউন্ডেশন কানাডা-ইসরায়েল থেকে অনুদান পেয়েছে। এই আবিষ্কারের পাশাপাশি, EoE-এর চিকিৎসায় অন্যান্য অগ্রগতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডুপিলুমাব (dupilumab) নামক একটি বায়োলজিক ওষুধ EoE-এর চিকিৎসায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, যা বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রেও অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়াও, ইট্রাসিডোমড (etrasimod) ওষুধটিও ৫২ সপ্তাহ ধরে EoE-এর চিকিৎসায় সহনশীল এবং কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো EoE রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গবেষণাটি ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রে ফ্যাকাল্টি অফ মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস-এ পরিচালিত হয়েছিল এবং এতে ইচিলভ হাসপাতাল (ইসরায়েল) এবং সিনসিনাটি চিলড্রেনস হাসপাতালের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও জড়িত ছিল। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা EoE-এর মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।