ওয়াশিংটন ডিসিতে আবারও ভারতের নাম শিরোনামে এসেছে, এইবার কেন্দ্রবিন্দু হলো দিল্লির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত আকর্ষণ।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এবং রিপাবলিকান পার্টির নেতারা ভারতের প্রতি একটি অর্থনৈতিক 'আঘাত' দিয়েছেন, যা বলা যেতে পারে একটি 'শক', কারণ যুক্তরাষ্ট্র এখন ৫০০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে যদি ভারত চীন ও রাশিয়ার সহায়তা থেকে সরে না আসে।
এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ বিবৃতি নয়, বরং আগামীর মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিতে পারে তার একটি প্রাকদর্শন — এমন একটি বিল যা ভারতের মতো দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে।
শুল্কের হুমকি নাকি অর্থনৈতিক জোরাজুরি?
সিনেটর গ্রাহাম তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, "ভারত, চীন ও রাশিয়া মোট তেলের ৭০% ক্রয় করে। এই অর্থ ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতা দিচ্ছে। এখনই সময় এই দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার।"
এটি গ্রাহামের প্রথমবার নয় ভারতকে টার্গেট করা। গত কয়েক মাসে তিনি বারংবার ভারতের বিরুদ্ধে টারিফ, স্যানকশন এবং এখন সরাসরি অর্থনৈতিক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান ভারত ১৯৯১ সালের ভারত নয়; সে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চোখে পড়তে ভয় পায় না।
ভারত বারবার গ্রাহাম ও অন্যান্য নেতাদের বলেছেন রাশিয়ার সঙ্গে কথোপকথনগুলো খেয়াল করতে, আর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভয়।
৫০০% শুল্কের হুমকি – ট্রাম্পের নতুন অর্থনৈতিক শক!
গ্রাহাম দাবি করেছেন, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এই কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত ছিলেন। প্রস্তাবিত 'স্যানকশন বিল' স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে যারা রাশিয়ার সঙ্গে, বিশেষ করে তেলের ক্ষেত্রে, বাণিজ্য চালিয়ে যাবে তাদের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০% শুল্ক আরোপ করা হবে।
সিনেটর গ্রাহাম এটিকে একটি "অর্থনৈতিক ব্লকবাস্টার" বলে অভিহিত করেছেন, যা রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার একটি প্রচেষ্টা।
ভারতের অবস্থান, কিন্তু চীনের পাশে!
বিলটিতে চীনকেও উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সিনেটর গ্রাহামের দৃষ্টি ভারতের ওপর কেন্দ্রীভূত, এজন্যই আমেরিকা ভারতকে চাপ দিতে চায় — এবং রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বকে 'শত্রু' এবং আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্বকে 'সাথী' হিসেবে দেখতে চায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো — আমেরিকার এই অর্থনৈতিক শক কি ভারতের ওপর কাজ করবে? উত্তর হলো না। ভারত বারবার বলেছে যে সে স্বাধীন নীতিতে বিশ্বাসী এবং আমেরিকা বা রাশিয়ার ছায়ায় থাকতে চায় না।
গত দুই বছরে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক ও বাণিজ্য আরও গভীর হয়েছে, আর আমেরিকা নিজের অস্ত্রাগারে 'টারিফ' ও 'স্যানকশন' দিয়ে কোনো কার্যকর হাতিয়ার খুঁজে পায়নি।
ভারতের পছন্দ, কিন্তু রাশিয়ার পাশে!
এই মুহূর্তে শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেন নয়, আমেরিকা নিজের মতো করে গড়ে তুলছে, চীন নিজের মতো করে, আর এখন ভারতও নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করছে — এটি নতুন শীতল যুদ্ধের চিত্র।
কিন্তু এবার পার্থক্য হলো — ভারত কোনো শিবিরে নেই, বরং নিজের অবস্থানে দৃঢ়।
৫০০% শুল্কের শক যতই বড় হোক, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট ও শক্তিশালী।
আগামী মাসের সিদ্ধান্ত, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কি ফ্লোরিশ করবে?
যদি জুলাই মাসে স্যানকশন বিল পাশ হয়, তবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। কিন্তু এবার ভারত প্রস্তুত — চ্যালেঞ্জ নিতে এবং জবাব দিতে। এখন দেখতে হবে, আমেরিকা কি সত্যিই ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ করবে? নাকি আবার ভারতের দৃঢ় অবস্থার মুখোমুখি হবে?
একটি বিষয় নিশ্চিত — অর্থনৈতিক শকের যুগ শেষ, আর ভারত এখন জানে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়!