নাসার জুনো মহাকাশযান বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলে এক অভূতপূর্ব আবিষ্কার করেছে। এটি এক নতুন ধরনের প্লাজমা তরঙ্গের সন্ধান পেয়েছে, যা বৃহস্পতির চৌম্বকীয় পরিবেশ ও মহাকাশে আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও গভীর করবে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি ১৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স (Physical Review Letters) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতির উত্তর মেরুর উপর দিয়ে প্রদক্ষিণ করার সময় জুনো মহাকাশযানের আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার (UVS) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই নতুন প্লাজমা তরঙ্গের সন্ধান পান। এই বিশেষ প্লাজমা তরঙ্গটি একটি আলফভন (Alfvén) তরঙ্গ হিসেবে শুরু হয়ে বৃহস্পতির চরম পরিস্থিতিতে একটি ল্যাংম্যুইর (Langmuir) তরঙ্গে রূপান্তরিত হয়। এই আলফভন-ল্যাংম্যুইর তরঙ্গটি অস্বাভাবিকভাবে কম কম্পাঙ্কে (low frequencies) স্পন্দিত হয়, যা বৃহস্পতির শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র এবং মেরু অঞ্চলের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাজমার সম্মিলিত ফল। ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা টুইন সিটিসের (University of Minnesota Twin Cities) গবেষকরা এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এই আবিষ্কারটি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি অন্যান্য চৌম্বকীয় গ্রহ বা নক্ষত্রের আশেপাশেও অনুরূপ প্লাজমা পরিবেশের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে মহাকাশে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। জুনো মহাকাশযানটি ২০১৬ সাল থেকে বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করছে এবং এর মেরু অঞ্চলের উপর দিয়ে দীর্ঘ ও জটিল পথ অনুসরণ করে। এই বিশেষ কক্ষপথটি মহাকাশযানটিকে বৃহস্পতির তীব্র বিকিরণ বলয় থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি এর যন্ত্রাংশগুলিকে বিস্তারিত পরিমাপ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
জুনোর ওয়েভস (Waves) যন্ত্রাংশটি চার্জিত কণা এবং বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন তড়িৎ-চুম্বকীয় সংকেতগুলি 'শুনতে' সক্ষম। এই নতুন প্লাজমা তরঙ্গের আবিষ্কার কেবল বৃহস্পতির রহস্যময় মেরু অঞ্চলের আলোকমালার (auroras) উপরই নতুন আলোকপাত করেনি, বরং এটি পৃথিবীর মহাকাশীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সুরক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে। বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ২০,০০০ গুণ শক্তিশালী এবং এর মেরু অঞ্চলের প্লাজমা অত্যন্ত পাতলা, যা এই ধরনের অভূতপূর্ব তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
এই গবেষণা মহাকাশীয় ঘটনাগুলির প্রতি আমাদের দৃষ্টিকে আরও প্রসারিত করবে এবং মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জীবনের সম্ভাবনা অনুসন্ধানেও পরোক্ষভাবে সহায়ক হবে।