২০২৫ সালের গ্রীষ্মকালে বিশ্বজুড়ে দাবানলের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর প্রভাবকে তুলে ধরেছে। কানাডার বিশাল বনভূমিতে প্রায় ২৪ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নির্গমনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনাগুলি বনভূমির কার্বন শোষণের ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে, যা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। অনেক বনভূমি এখন কার্বন শোষণকারী (carbon sinks) থেকে কার্বন নিঃসরণকারী (carbon sources) হয়ে উঠছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ইউরোপের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে গ্রীস এবং বলকান অঞ্চলে, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রোমানিয়াতেও জুলাই মাসে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা পৌঁছেছিল, যা অতীতের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এই চরম তাপমাত্রার পরিস্থিতি দাবানলের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। বুয়েনস আইরেস এলাকায় অস্বাভাবিক উষ্ণতা দেখা গেলেও, ঠান্ডা বাতাসের আগমনের পূর্বাভাস রয়েছে।
দাবানলের ফলে বনভূমির কার্বন শোষণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি, মহাসাগরের উপরও এর প্রভাব পড়ছে। দাবানল থেকে নির্গত কণা ও পুষ্টি উপাদান বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে সমুদ্রে পৌঁছে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন হলো এক ধরণের আণুবীক্ষণিক জলজ উদ্ভিদ যা বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 শোষণ করে, এবং এদের বৃদ্ধি পৃথিবীর কার্বন চক্রকে প্রভাবিত করে, যা বিশ্ব জলবায়ু ভারসাম্যের উপর প্রভাব ফেলে।
এই পরিস্থিতিতে, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় ব্যাপক নীতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। এই নীতিগুলিতে শুধুমাত্র গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করাই নয়, বরং বনভূমি বাস্তুতন্ত্রের সঠিক ব্যবস্থাপনাও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বনভূমিগুলি কেবল কার্বন শোষণকারী হিসেবেই কাজ করে না, বরং জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং স্থানীয় আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, বনভূমি সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি অপরিহার্য অংশ।