দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির ম্যাগেলানেস এবং চিলিয়ান অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে, বিশেষ করে কাবো দে হোর্নোসের কাছে অবস্থিত একটি পাহাড়ের গায়ে এক অদ্ভুত মুখের আদল দেখা গেছে। এই প্রাকৃতিক গঠনটি একটি ভি-আকৃতির মাথা এবং বড়, ভিনগ্রহের প্রাণীর মতো চোখ সহ একটি মুখের অবয়ব তৈরি করেছে, যা সম্প্রতি গুগল ম্যাপসের মাধ্যমে জনসমক্ষে এসেছে এবং ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাটি প্যারেডোলিয়া (Pareidolia) নামক একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতার উদাহরণ, যেখানে মস্তিষ্ক এলোমেলো বা অস্পষ্ট উদ্দীপনার মধ্যে পরিচিত প্যাটার্ন, বিশেষ করে মানুষের মুখ খুঁজে বের করে। মুখমণ্ডল উপলব্ধির বিশেষজ্ঞ ডঃ রবিন ক্রেমার ব্যাখ্যা করেছেন যে, আমাদের মুখ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় এটি অনেক সময় এমন প্যাটার্ন খুঁজে পায় যেখানে আসলে কোনো মুখ নেই। এটি একটি স্বাভাবিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সহায়ক ছিল, যেমন কোনো সম্ভাব্য বিপদ বা শিকারীকে দ্রুত শনাক্ত করার ক্ষমতা।
প্রকৃতিতে প্যারেডোলিয়ার এমন উদাহরণ নতুন নয়। মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে আবিষ্কৃত 'ফেস অন মার্স' (Face on Mars) তেমনই একটি বিখ্যাত উদাহরণ। ১৯৭৬ সালে ভাইকিং ১ অরবিটার দ্বারা তোলা ছবিতে মঙ্গল গ্রহের একটি উপত্যকাকে মুখের মতো দেখাচ্ছিল, যা নিয়ে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তোলা ছবিতে দেখা যায় যে এটি আসলে আলো-ছায়ার খেলা এবং প্রাকৃতিক ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট একটি ভূমিরূপ মাত্র। চিলির এই পর্বতগাত্রের মুখের আদলটিও প্যারেডোলিয়ার একটি চমৎকার উদাহরণ। যদিও কিছু মানুষ এটিকে ভিনগ্রহের প্রাণীর কার্যকলাপ বা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন বলে মনে করছেন, তবে বিজ্ঞানীরা এটিকে প্রকৃতির এক স্বাভাবিক খেলা হিসেবেই দেখছেন। এই ধরনের ঘটনাগুলি আমাদের উপলব্ধির ক্ষমতা এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করে এবং আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা প্রায়শই আমাদের চারপাশের জগতে অর্থ এবং প্যাটার্ন খুঁজি, যা আমাদের মানব অভিজ্ঞতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।