ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স. জৈশঙ্কর সম্প্রতি বলেছেন, শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষের হাতে চলমান ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গ্রেফতারের কারণ ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত একটি বিতর্কিত সামুদ্রিক চুক্তি। জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ওই সময়ের ওই চুক্তির ফলে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের কিছু মৎস্য আহরণের অধিকার ত্যাগ করতে হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ভারত-শ্রীলঙ্কা সামুদ্রিক সীমানা চুক্তির মাধ্যমে অবাছন্ন কাটাচিভু দ্বীপ শ্রীলঙ্কার হাতে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী ১৯৭৬ সালের চুক্তি মৎস্য আহরণ ক্রিয়াকলাপে আরও বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা এই অঞ্চলে আজও বিবাদ সৃষ্টি করে চলেছে। জৈশঙ্কর কংগ্রেস দলের ঐ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে যদি তখন সঠিকভাবে সংসদ কার্যকর থাকত, তবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ হতো না।
জৈশঙ্কর জরুরি অবস্থার ২১ মাসের এই সময়ের মধ্যে জনগণ ও সংসদের পর্যবেক্ষণের অভাবের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং জরুরি অবস্থার বিরোধী নেতাদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কও স্মরণ করেছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রতি তীক্ষ্ন সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই জরুরি অবস্থার জন্য ক্ষমা চাওয়া থেকে তারা বিরত রয়েছেন, যা দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর আঘাত ছিল।
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের 'ঘোষণাবিহীন জরুরি অবস্থা' হওয়ার অভিযোগকে খণ্ডন করে জৈশঙ্কর বলেন, এখন জরুরি অবস্থার সময় নয় এবং ভবিষ্যতেও হবে না। তিনি বীর যুব মোর্চার মক সংসদকে ভারতের গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
জৈশঙ্কর বলেন, জরুরি অবস্থায় পাঁচটি সাংবিধানিক সংশোধনী এবং ৪৮টি আদেশ পাশ হয়েছিল, যার মধ্যে একটি ছিল জরুরি অবস্থার বিধান আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ ব্যাহত করা। তিনি ভারতের ঐ সময়ের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, "গণতন্ত্র আমাদের রক্তে প্রবাহিত," যা ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছিল।
জৈশঙ্কর ঐক্যের মুহূর্তের কথাও উল্লেখ করেন, যেমন অপারেশন সিন্দুর, যেখানে বিরোধী নেতারাও দেশের বৈশ্বিক অবস্থান মজবুত করার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন, যা গভীর জাতীয় গর্বের পরিচায়ক এবং জরুরি অবস্থার কর্তৃত্ববাদিতার বিরুদ্ধে একটি প্রতিষেধক।
বীর যুব মোর্চার মক সংসদ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং যে কোনো ধরনের কর্তৃত্ববাদ থেকে সেগুলো রক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরে। এই অনুষ্ঠান দেশের সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষায় সম্মিলিত দায়বদ্ধতার কথাও স্মরণ করায়।
কাটাচিভু দ্বীপের বিরোধ বহুদিনের। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও দল এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে আসছে। জৈশঙ্করের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও বীর যুব মোর্চার উদ্যোগ বর্তমান বিতর্ককে নতুন করে জোরদার করেছে এবং বিষয়টির জন্য সকল পক্ষের উদ্বেগ যথাযথভাবে মিটানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট সমাধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
২৭ জুন ২০২৫ তারিখে এই বিষয় এখনো সক্রিয় রাজনৈতিক আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে বিভিন্ন মহল থেকে আরও সংলাপ ও সমাধানের আহ্বান জোরদার হচ্ছে।