আইসল্যান্ডের এক কৃষক, জুমুন্ডুর ওলাসন, তাঁর ২০০৩ সালের স্কোডাওکتাভিয়া গাড়িটিকে এক মিলিয়ন কিলোমিটার চালানোর এক অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এই গাড়িটি, যা একটি ২.০ লিটারের ১১৫ হর্সপাওয়ারের পেট্রোল ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, এটি কেবল গাড়ির নির্ভরযোগ্যতাই প্রমাণ করে না, বরং মালিকের যত্ন সহকারে রক্ষণাবেক্ষণ এবং চালনার পদ্ধতিরও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
২০০৩ সালে কেনা এই গাড়িটি প্রথমদিকে কৃষকের স্ত্রী ব্যবহার করতেন। ২০০৭ সাল থেকে জুমুন্ডুর এটি প্রতিদিন ব্যবহার করছেন। তিনি গাড়িটি খামারের কাজে, অসমতল রাস্তায়, প্রতিকূল আবহাওয়ায় এবং দীর্ঘ ছুটির ভ্রমণে ব্যবহার করেছেন, যেখানে তাঁর দীর্ঘতম একক যাত্রা ১,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি ছিল। বন্ধুদের নতুন গাড়ি কেনার পরামর্শ সত্ত্বেও, তিনি তাঁর প্রিয় গাড়িটিকে এক মিলিয়ন কিলোমিটারের মাইলফলক পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সংকল্পে অটল ছিলেন। যদিও গাড়ির ইলেকট্রনিক ওডোমিটার ৯৯৯,৯৯৯ কিলোমিটারে থেমে গিয়েছিল, তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বলে মনে করেন।
এই দীর্ঘ যাত্রার পেছনের রহস্য হল জুমুন্ডুরের নিপুণ রক্ষণাবেক্ষণ। তিনি প্রতি ৩০,০০০ কিলোমিটারে উচ্চ মানের তেল দিয়ে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতেন এবং ইঞ্জিনকে ৩,০০০ RPM-এর নিচে রেখে সাবধানে গাড়ি চালাতেন। এই পদ্ধতি মূল ইঞ্জিন, গিয়ারবক্স এবং ক্লাচকে অক্ষত রেখেছে। তিনি বিশেষ করে শক অ্যাবজরবার, ব্রেক এবং রেডিয়েটরের প্রতিও মনোযোগ দিতেন। তাঁর মতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সতর্ক চালনার পদ্ধতিই গাড়ির দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি। তিনি সবসময় ছোটখাটো সমস্যাগুলিও সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করতেন, যাতে সেগুলি বড় আকার ধারণ না করে।
এই মাইলফলক অর্জনের পর, তিনি একটি নতুন স্কোডাওکتাভিয়া কিনেছেন, তবে তিনি সন্দিহান যে এটি তাঁর পুরনো গাড়ির মতো পারফর্ম করতে পারবে কিনা। তাঁর পুরনো গাড়িটিকে তিনি আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিকের একটি হাই স্কুলে দান করবেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা এটিকে খুলে পরীক্ষা করে এর যান্ত্রিক দিকগুলি অধ্যয়ন করতে পারবে। গাড়ির দীর্ঘায়ু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, আধুনিক গাড়িগুলি কি পুরনো মডেলগুলির মতো দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য হতে পারে? জুমুন্ডুরের এই অর্জন প্রমাণ করে যে, সঠিক যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে একটি গাড়িও দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বস্ত সঙ্গী হতে পারে। এটি গাড়ির প্রতি মানুষের আবেগ এবং নতুনত্বের চেয়ে নির্ভরযোগ্যতা ও অর্থনীতির প্রতি মানুষের মূল্যবোধকেও তুলে ধরে। স্কোডাওکتাভিয়া তার নির্ভরযোগ্যতার জন্য পরিচিত, এবং এই ঘটনাটি সেই খ্যাতিকেই আরও দৃঢ় করেছে। আইসল্যান্ডের কঠোর জলবায়ু এবং রুক্ষ ভূখণ্ডে গাড়ির এই দীর্ঘস্থায়িত্ব সত্যিই প্রশংসার যোগ্য, যা সেখানকার গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের উচ্চ মানকেও নির্দেশ করে।