সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অভিভাবকদের মধ্যে মানসিক চাপের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেলের একটি উপদেষ্টা প্রতিবেদন এই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমাজ ও নীতি নির্ধারকদের পক্ষ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৩৩% অভিভাবক উচ্চ মাত্রার মানসিক চাপের কথা জানিয়েছেন, যেখানে অন্য প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই হার মাত্র ২০%। আর্থিক টানাপোড়েন, সময়ের অভাব, সন্তানদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব এই ক্রমবর্ধমান চাপের প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম।
অভিভাবকদের উচ্চ মাত্রার মানসিক চাপ শিশুদের মানসিক ও জ্ঞানীয় বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সার্জন জেনারেলের প্রতিবেদনে নীতিগত পরিবর্তন, সম্প্রদায়-ভিত্তিক কর্মসূচি, কর্মক্ষেত্রে সহায়তা এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে চাপ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যা কেবল শিশুদেরই নয়, বৃহত্তর সমাজকেও উপকৃত করবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অভিভাবকদের মানসিক চাপ তাদের সন্তানদের আচরণ, আবেগ এবং শেখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি, কিছু গবেষণা অনুযায়ী, অভিভাবকদের মানসিক চাপ শিশুদের উপর জিনগত প্রভাবও ফেলতে পারে। বিশেষ করে, বাবা-মায়ের মানসিক চাপ সন্তানদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং আচরণগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মক্ষেত্রে সহায়ক নীতি, যেমন - বেতনসহ ছুটি এবং নমনীয় কাজের সময়সূচী, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিশু যত্ন সহায়তাও অভিভাবকদের চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। সামাজিক সমর্থন এবং একে অপরের সাথে খোলামেলা আলোচনাও এই চাপ মোকাবেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অভিভাবকদের মানসিক চাপ একটি জটিল সমস্যা যা বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভরশীল। আর্থিক সমস্যা, সময়ের অভাব, সন্তানের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এর মধ্যে প্রধান। এই সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক স্তরে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসই পারে অভিভাবকদের মানসিক চাপ কমিয়ে একটি সুস্থ ও সুখী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে।